যতি বা ছেদ চিহ্ন Last updated: 5 months ago
- যতি, বিরাম বা ছেদ চিহ্ন হচ্ছে ব্যাকরণের এক প্রকার লিখন কৌশল যা বাক্য পাঠে , পাঠকের মনের অর্থের সুস্পষ্টতা জ্ঞাপন করে।
- সর্বপ্রথম ১৮৪৭ সালে বাংলা গদ্যে যতি চিহ্নের ব্যবহার করেন = ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর(বেতালপঞ্চবিংশতি গ্রন্থে)।
- যতি চিহ্নের সংখ্যা = ১২ টি (তবে বিরাম চিহ্নের সংখ্যা কিন্তু ১২টি নয়। বাংলা ভাষায় বিরাম চিহ্নের সংখ্যা ৯ টি)।
তার মানে যতি চিহ্ন আর বিরাম চিহ্ন আলাদা জিনিস?
বিরাম’ শব্দের অর্থ বিশ্রাম। বিরাম চিহ্ন দ্বারা সে সকল চিহ্নকে বুঝায় যেখানে অল্প সময়ের জন্য হলেও বিশ্রাম নিতে হয় মানে থামতে হয়। মোট যতি চিহ্নের সংখ্যা ১৬টি হলেও মোট বিরাম চিহ্নের সংখ্যা ৯ টি। হাইফেন, ইলেক ও ব্র্যাকেট এই ৩ টি চিহ্নে থামতে হয় না তাই এই ৩ টি চিহ্নকে যতি চিহ্ন বলা হয় কিন্তু বিরাম চিহ্ন বলা হয় না। তাই মনে রাখতে হবে সকল বিরাম চিহ্নই যতি চিহ্ন কিন্তু সকল যতি চিহ্ন বিরাম চিহ্ন নয়।
বাংলায় ব্যবহৃত যতি বা ছেদচিহ্ন
যতি চিহ্নের নাম |
আকৃতি |
বিরতি–কাল–পরিমাণ |
কমা(Comma) |
, |
১(এক) বলতে যে সময় প্রয়োজন । |
সেমি কোলন (Semi Colon) |
; |
১ বলার দ্বিগুন সময় । |
দাঁড়ি( পূর্নচ্ছেদ ) (Full Stop) |
। |
এক সেকেন্ড । |
জিজ্ঞাসা চিহ্ন (Note of Interrogation) |
? |
ঐ |
বিস্ময় চিহ্ন (Note of Exclamation) |
! |
ঐ |
কোলন(Colon) |
: |
ঐ |
কোলন ড্যাস (Colon Dash) |
:- |
ঐ |
ড্যাস (Dash) |
– |
ঐ |
হাইফেন(Hyphen) |
– |
থামার প্রয়োজন নেই । |
ইলেক বা লোপ চিহ্ন(Apostrophe) |
, |
থামার প্রয়োজন নেই । |
উদ্ধরণ চিহ্ন (Inverted Comma) |
“ “ |
’এক’ উচ্চারণে যে সময় লাগে । |
ব্রাকেট ( বন্ধনী-চিহ্ন )(Bracket) |
(){} [ ] |
থামার প্রয়োজন নেই । |
ব্যাকরণিক চিহ্ন মোট ৪ টি |
||
ধাতু |
√ |
|
পূর্ববর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন |
> |
|
পরবর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন |
< |
|
সমানবাচক বা সমস্তবাচক |
= |
কোথায় কোন যতি চিহ্ন বসে তা মনে রাখার সহজ উপায়:
- বাক্যের পরিসমাপ্তি বুঝাতে দাড়ি (।) বসে।
- হৃদয়ের আবেগ বুঝাতে বিস্ময় চিহ্ন (!) বসে।
- বর্ণের লোপ বুঝাতে ইলেক বা লোপ চিহ্ন (') বসে।
- প্রত্যক্ষ উক্তি বুঝাতে উদ্ধরণ চিহ্ন (“ ”) বসে।
- প্রশ্ন করা বুঝাতে প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) বসে।
- অপূর্ণ বাক্যের পর অন্য কোন বাক্যের অবতারণা করা হলে কোন চিহ্ন (:) বসে।
- সময় নির্দেশ করতে কোন চিহ্ন (:) বসে।
- জটিল ও যৌগিক বাক্যে একাধিক বাক্যের সংযোগ /সমন্বয় বুঝাতে এবং অসম্পূর্ণ বাক্যের শেষে ড্যাস চিহ্ন(-) বসে।
- কোনো কথার দৃষ্টান্ত/ বিস্তার বুঝাতে ড্যাস চিহ্ন(-) বসে।
- উদাহরণ প্রদান করতে কোলন ড্যাস চিহ্ন (:-) বসে।
- সমাসবদ্ধ শব্দ পৃথক করতে হাইফেন চিহ্ন (-) বসে।
- ব্যাখ্যামূলক অর্থে সাহিত্যে ১ম বন্ধনী () বসে।
- কমার চেয়ে বেশি বিরতির প্রয়োজন হলে এবং একাধিক স্বাধীন বাক্যকে একটি বাক্যে লিখলে সেগুলোর মাঝখানে সেমিকোলন চিহ্ন (;) বসে।
- উপযুক্ত ১৩ টি নিয়মের বাইরে সাধারণত কমা (,) বসে।
যতিচিহ্নের বিরতিকাল
কোন যতি চিহ্নে কতক্ষণ থামতে হয় তা মনে রাখার উপায়:
- কম ও উদ্ধরণ চিহ্ন এই দুইটি চিহ্নে থামতে হয় এক বলতে যে সময় লাগে ততক্ষণ।
- সেমিকোলন চিহ্নে থামতে হয় ‘এক’ বলার দ্বিগুণ সময়।
- হাইফেন, ইলেক ও ব্র্যাকেট চিহ্নে থামতে হয় না।
- বাকি ৬ টি চিহ্নে থামতে হয় ১ সেকেন্ড করে।
- ব্র্যাকেট চিহ্ন = ৩ টি (সাধারণত গণিতশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয় এবং বাংলায় ব্যাখ্যা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়)।
- একটি পূর্ণ বাক্যের পরে কয়টি চিহ্ন বসতে পারে? = ৩ টি চিহ্ন। প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?), দাড়ি (।) এবং বিস্ময় চিহ্ন (!)এই ৩ টি চিহ্নকে প্রান্তিক বিরাম চিহ্নও বলা হয়।
- সম্বোধনের পর কোন চিহ্ন বসে? = কমা / পাদচ্ছেদ।
- পূর্বে সম্বোধনের পর কোন চিহ্ন বসত? = বিস্ময় চিহ্ন।
- ধাতু বুঝাতে কোন চিহ্ন বসে: √ = সঠিক।
- বাক্যমধ্যস্থ কোনো অব্যয়ের স্থলে বসতে পারে = সেমিকোলন (; )। যেমন: তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করেছ তাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছ।
- বাক্যমধ্যস্থ কোনো বিভক্তির স্থলে বসতে পারে = হাইফেন ( ~ )। যেমন: চলো, একটু চা এর দোকান থেকে ঘুরে আসি। এই বাক্যে বিভক্তি হচ্ছে ‘এর’ আর এই বিভক্তির পরিবর্তে হাইফেন বসিয়ে চাইলে এভাবেও বলা যেত, ‘চলো, একটু চা-দোকান থেকে ঘুরে আসি।
- প্রত্যক্ষ উক্তিতে যতি চিহ্ন বসে = ৩ টি। যেমন: সে বলল, “তুমি কি আজ যাবে?”
- প্রত্যক্ষ উক্তিতে কোনো গ্রন্থের নাম থাকলে যতি চিহ্ন বসে = ৪ টি। যেমন; সে বলল, “তুমি কি ‘গীতাঞ্জলি’ পড়েছ?”
- প্রত্যক্ষ উক্তিতে কাউকে সম্বোধন করা হলে যতি চিহ্ন বসে = ৪ টি। যেমন: সে বলল, “মিতা, তুমি কি স্কুলে যাবে না?”
- প্রত্যক্ষ উক্তিতে কাউকে সম্বোধন করে কোনো গ্রন্থের নাম থাকলে যতি চিহ্ন বসে = ৫ টি। যেমন: সে বলল, “প্রিয়া, তুমি কি ‘অগ্রদূত বাংলা’ সংগ্রহ করেছ?”
যতি বা বিরাম চিহ্ন বলা হয় না এমন কিছু চিহ্ন
ক্রম নির্দেশ শব্দ সংক্ষেপের জন্য ব্যবহার করতে হবে = একবিন্দু (.)। মোহাম্মদ / মুহম্মদ /ডাক্তার / ডক্টর /দ্রষ্টব্য । বিশেষ দ্রষ্টব্য প্রভৃতি শব্দের সংক্ষেপণে ‘মোঃ / মুঃ / ডাঃ / ডঃ / দ্রঃ / বিঃ দ্রঃ প্রভৃতি লেখার প্রবণতা লক্ষণীয়। প্রকৃতপক্ষে বিসর্গ (ঃ) একটি পৃথক বর্ণ; কোনো সংক্ষেপচিহ্ন নয়। তাই শব্দ সংক্ষেপণে অযথা। অন্য একটি বর্ণের আমদানি অনুচিত। প্রমিত বাংলায় একবিন্দু (.) কে সংক্ষেপণের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই শব্দ সংক্ষেপণে বিসর্গ ব্যবহার করা বিধেয় নয়। বিসর্গ ব্যবহার করলে ‘মোঃ / মুঃ / ডাঃ / ডঃ / দ্রঃ / বিঃ দ্রঃ প্রভৃতি শব্দ যথাক্রমে “মোহ্ / মুহ্/ ডাহ্/ ডহ্ / দ্রহ্/ বিহ্ / দ্ৰহ্’ ইত্যাদিরূপে উচ্চারিত হবে। এগুলো অর্থহীন। অতএব শব্দ সংক্ষেপণে বিসর্গ পরিহার করতে হবে এবং লিখতে হবে মো. / মু. / ডা. / ড. / দ্র. / বি. দ্র.।
- বাক্যের উদ্ধিতির কোনো অংশ বাদ দিতে চাইলে ব্যবহার করতে হবে = ত্রিবিন্দু (...)। যেমন: যে দেশে বিচার ব্যবস্থা…সেদেশে না থাকাই উত্তম।
- একটির বদলে অন্যটির সম্ভাবনা বুঝাতে ব্যবহার করতে হবে = বিকল্প চিহ্ন (/)। যেমন: সমাস / কারক যেকোনোটা দাগাও।
এই পোস্ট সহায়ক ছিল?
2 out of 2 Marked as Helpfull !