অনুজ্ঞা Last updated: 5 months ago
আদেশ, অনুরোধ, অনুমতি, প্রার্থনা ইত্যাদি বোঝাতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালের মধ্যম পুরুষে ক্রিয়াপদের যে রূপ হয়, তাকে অনুজ্ঞা বলে। কাল একবার এসো। তুই বাড়ি যা। ‘ক্ষমা কর মোর অপরাধ।’
ওপরের বাক্যগুলোর প্রথম বাক্যে অনুরোধ, দ্বিতীয় বাক্যে আদেশ এবং তৃতীয় বাক্যে প্রার্থনা বোঝাচ্ছে। আদেশ, অনুরোধ, অনুমতি, প্রার্থনা, অনুনয় প্রভৃতি অর্থে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কালে মধ্যম পুরুষে ক্রিয়াপদের যেরূপ হয় তাকে অনুজ্ঞা পদ বলে।
অনুজ্ঞা পদের গঠন:
১. মধ্যম পুরুষের তুচ্ছার্থক বা ঘনিষ্ঠার্থক সর্বনামের অনুজ্ঞায় ক্রিয়াপদে কোনো বিভক্তি যোগ হয় না। মূল ধাতুটিই ক্রিয়াপদ রূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন: মধ্যম পুরুষ তুচ্ছার্থক বা ঘনিষ্ঠার্থক তুই (বই) পড়। তোরা (বই) পড়।
কিন্তু অনুরোধ, আদেশ বা অনুরূপ অর্থে সম্ভ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের সর্বনাম ‘আপনি’ বা ‘আপনারা’ এবং সাধারণ মধ্যম পুরুষের সর্বনাম ‘তুমি’ বা তোমরা পদের সঙ্গে যে অনুজ্ঞা পদের ব্যবহারহয়, তাতে বিভীক্ত যুক্ত থাকে। যেমন:
সম্ভ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষ-আপনি (আপনারা) আসুন (আস্+উন)।
সাধারণ মধ্যম পুরুষ- তুমি (তোমরা) আস (আস্+অ)।
২. প্রাচীন বাংলা রীতিতে মধ্যম পুরুষের অনুজ্ঞায় ক্রিয়ার সঙ্গে ‘হ’ যোগ করার নিয়ম ছিল। এই ‘হ’ বর্তমানে অ এবং ও তে রূপান্তরিত হয়েছে। যেমন:
ক) ‘করহ [= কর] আপন কাজ, তাতে কিবা ভয় লাজ।’
খ) ‘অধম সন্তানের মাগো দেহ [দাও] পদচ্ছায়া।’
- উত্তম পুরুষের অনুজ্ঞা পদ হতে পারে না। কারণ, কেউ নিজেকে আদেশ করতে পারে না।
- অপ্রত্যক্ষ বলে নাম পুরুষের অনুজ্ঞা হয় না। তবে এই মত সকলে সমর্থন করেন না।
- বাংলা অনুজ্ঞা আলোচিত হয় ব্যাকরণের = বাক্যতত্ত্বে।
- যৌগিক ক্রিয়া ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞার অর্থ প্রকাশ করে।
- কাজটি করে ফেল –আদেশ অর্থে ব্যবহৃত।
- চেষ্টাকর, সবই বুঝতে পারবে –সম্ভাবনা অর্থে ব্যবহৃত।
- তোমার মঙ্গল হোক – অনুজ্ঞাসূচক বাক্য।
৪. মধ্যম ও নাম পুরুষের বর্তমান অনুজ্ঞার রূপ: ধরণ সর্বনাম বিভক্তি উদাহরণ/ক্রিয়াপদ
১. সম্ভ্রমাত্মক: আপনি, আপনারা, তিনি, তাঁরা উন, ন যাউন, যান
২.সাধারণ: তুমি, তোমরা অ, ও কর, করো, যাও
৩.তুচ্ছার্থক/ঘনিষ্ঠার্থকঃ তুই, তোরা ০ (শূন্য) র্ক, যা
৪. সাধারণ সে, তারা উক করুক
জ্ঞাতব্য:
ক) নির্দেশক ভাবের সাধারণ বর্তমান কালের সম্ভ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের বিভক্তি = এন। যেমন: আপনি দেখেন।
সম্ভ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের অনুজ্ঞা পদের বিভক্তি- ‘উন’। যেমন: আপনারা দেখুন।
খ) চলতি ভাষায় ধাতুর মূলের এ-কারান্ত বা ও-কারান্ত হলে উক্ত পার্থক্য লোপ পায়। যেমন: নেন, লন, নিন<লউন, লোন।
গ) মধ্যম ও নাম পুরুষে ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞার রূপ:
সম্ভ্রমাত্মক আপনি, আপনারা – ইবেন – বেন করিবেন করবেন
সাধারণ তুমি, তোমরা – ইও – ও করিও করো
তুচ্ছার্থক/ঘনিষ্ঠার্থক তুই, তোরা – ইস – স করিস, খাইস খাস
সাধারণ সে, তারা – ইবে – বে করিবে করবে
দ্রষ্টব্য: ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞা এবং ঘটমান ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা
১. ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞা: মূল ক্রিয়াপদের সঙ্গে -ইতে/-তে বিভক্তি যুক্ত হয়ে অসমাপিকা ক্রিয়াপদ গঠন করা যায়। এই অসমাপিকা ক্রিয়াপদ এবং থাক্ ধাতুর সঙ্গে (সাধারণ) বর্তমান অনুজ্ঞার বিভক্তি যুক্ত করে যে ক্রিয়াপদ হয়, উভয়ে মিলে যৌগিক ক্রিয়া উৎপন্ন করে। এই যৌগিক ক্রিয়া ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞার অর্থ প্রকাশ করে। যেমন:
(সে)- ইতে/-এত+-উক (করিতে/করতে থাকুক)।
(তিনি/আপনি)- ইতে/-তে+উন (করিতে/করতে থাকুন)
(তুমি)-ইতে/-তে+-অ-ও (করিতে/করতে থাকা/থাকো)।
(তুই)-ইতে/তে+ ০ (করিতে/করতে থাক্)।
মূল ধাতুর সঙ্গে অসমাপিকা ক্রিয়া বিভক্তি-ইতে/-তে যুক্ত হয়; এরূপ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়া সর্বদা অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকে। এই অসমাপিকা ক্রিয়া এবং সাধারণ বর্তমানের অনুজ্ঞার ক্রিয়াবিভক্তিযুক্ত থাক্ ধাতু (ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞা) মিলে যৌগিক ক্রিয়া উৎপন্ন করে। এই যৌগিক ক্রিয়া ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞার অর্থ প্রকাশ করে।
থাক্ ধাতুর সঙ্গে যুক্ত ক্রিয়াবিভক্তিগুলোই অনুজ্ঞা অর্থ প্রকাশ করে। মূল ক্রিয়া থেকে উৎপন্ন অসমাপিকা ক্রিয়াটি ঘটমানতা প্রকাশে সাহায্য করে।
২. ঘটমান ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা: উপযুক্ত কারণেই ঘটমান ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞার জন্য পৃথক ক্রিয়াবিভক্তির অস্তিত্ব স্বীকার করা অনাবশ্যক। যেমন:
-ইতে/-তে+-ইবেন/-বেন (করিতে থাকিবেন/করতে থাকবেন)।
-ইতে/-তে+-ইও-এ/-ও (করিতে থাকিবেন/করতে থাকো)।
-ইতে/-তে+-ইস (করিতে থাকিবেন/করতে থাকিস)।
-ইতে/-তে+-ইবে/-বে (করিতে থাকিবেন/করতে থাকবে)।
জ্ঞাতব্য
ক) ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞায় উত্তম পুরুষ ব্যবহৃত হয় না।
খ) সম্ভ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের সাধারণ ভবিষ্যতের ক্রিয়ার রূপটি সম্ভ্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় ব্যবহৃত হয়।
ক) বর্তমান কাল:
১. আদেশ : কাজটি করে ফেল। তোমরা এখন যাও।
২. উপদেশ : সত্য গোপন করো না।কড়া রোদে ঘোরাফেরা করিস না।‘পাতিস নে শিলাতলে পদ্ম পাতা।’
৩. অনুরোধ : আমার কাজটা এখন কর।অঙ্কটা বুঝিয়ে দাও না।
৪. প্রার্থনা : আমার দরখাস্তটা পড়ুন
৫. অভিশাপ : মর, পাপিষ্ঠ।
খ) ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞা:
১. আদেশে : সদা সত্য বলবে।
২. সম্ভাবনায়: চেষ্টা কর, সবই বুঝতে পারবে।
৩. বিধান অর্থে : রোগ হলে ওষুধ খাবে।
৪. অনুরোধে:কাল একবার এসো (বা আসিও বা আসিবে)।
এই পোস্ট সহায়ক ছিল?
1 out of 1 Marked as Helpfull !